১৪/২/২০১৮
স্কুল কলেজে পড়াকালীন হপ্তার শুরুতে যখনই মায়ের কাছে হাত খরচের টাকা চাইতাম, মা বলত, ‘নিজে পার্স খুলে নিয়ে নাও।’ আমি সবসময়েই দেখতাম মার পার্সে টাকার চেয়ে উটকো কাগজের ভিড়ই বেশি। মাস কয়েক ধরে জমতে থাকা বাজারের ফর্দ, দর্জির দোকানের রসিদ, শান্তিপুরে কাচতে দেওয়া কাপড়ের রসিদ, অগুন্তি বাসের টিকিট, বিবিধ ভিসিটিং কার্ডের সম্ভার, বাতিল কাগজ, ঘামে চেপ্টে যাওয়া কাগজ, বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া কাগজ, মাটি থেকে যত্নে কুড়িয়ে রাখা কাগজ, ইত্যাদি। স্মৃতির ভার বহন করা কাগজগুলোকে শত চেষ্টাতেও মা জননী ফেলতে পারতেন না। ফেললেও আবার কিছুদিনের মধ্যেই নতুন কাগজেরা ভিড় করে আসত পার্সে। এক আধ বার এমনও হয়েছে যে পার্স খুলে টাকা খুঁজতে গিয়ে একটা নয়া পয়সাও খুঁজে পাইনি, শুধুই রাশিকৃত কাগজ আর কাগজ। একটা মাত্র সাত-আট ইঞ্চি সাইজের ব্যাগের ওই ধারণ ক্ষমতা দেখে তাজ্জব বনে যেতাম। বিরক্তও লাগত। মনে হত টান মেরে দিই ফেলে কাগজগুলো। মা বলত, ‘এই ফেলিস না! আমি দেখেশুনে পরে ফেলব’। এই ‘পর’টা ঠিক আসে না। মধুসূদন দাদার ভাঁড়ের মত পার্সে কাগজের পেরেনিয়াল সাপ্লাই ঘটে থাকে। ঠিক যেমন, বসবার ঘর, শোওয়ার ঘর রাশি রাশি ‘প্রয়োজনীয়’ কাগজে ভরিয়ে ফেলা প্রসঙ্গে বাবার ‘পরে ঠিক সময় মত কাগজগুলো ফেলব’ উদ্ধৃতিটা আমার পঁচিশ বছরের জীবনে খুব বেশী বার ‘ফেললাম’- এ পরিণত হতে দেখিনি!
এত কিছু বলার কারণ? গতকাল, পোস্ট অফিসে গেছিলাম একটা স্পিড পোস্ট করতে। খুঁজে পেতে পার্সে দু তিনটে দশ টাকার নোট বৈ আর কিছু ছিল না। আর পেলাম গুচ্ছের কাগজ। কী মনে হতে পিঠের ব্যাগটাও খুলে দেখলাম। বিগত কয়েক মাস ধরে জমতে থাকা গুচ্ছের রসিদ, বাসের টিকিট, বিবিধ ভিসিটিং কার্ডের সম্ভার, বাতিল কাগজ, ঘামে চেপ্টে যাওয়া কাগজ, বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া কাগজ, মাটি থেকে যত্নে কুড়িয়ে রাখা কাগজ, ইত্যাদি। ঘরে ফেরার পর ডেস্ক খুলে দেখলাম। সেখানেও উটকো কাগজের পাহাড়…
উপলব্ধিঃ না চাইতেও সন্তানেরা মা বাবার পদাঙ্ক আনমনেই অনুসরণ করে ফেলে।
বিঃদ্রঃ না, এটা মাতৃ-পিতৃ পুজন দিবস পোস্ট নয়!